
ইলিশ পোলাও রান্নার রেসিপি – ইলিশ পোলাও রান্নার নিয়ম – সকল মাছের সেরা মাছ ইলিশ মাছ। ইলিশ মাছের নাম শুনলেই মনে হয় জিভে জল চলে আসছে!
আমরা বিভিন্ন ধরনের পোলাও রেসিপি খেয়ে থাকি তার মধ্যে ইলিশ পোলাও রেসিপি বাংলা অন্যতম। ইইলিশ পোলাও রান্নার রেসিপিটি সম্ভবত বাঙালি জাতিরা সবচেয়ে বেশি খেয়ে থাকে।
পৃথিবীর অন্যান্য দেশগুলোতে ইলিশ পোলাও রান্নার রেসিপি এতটা জনপ্রিয়তা অর্জন করতে পারেনি যতটা না আমাদের দেশে অর্জন করেছে। এমন অনেকেই আছেন যারা কাটাযুক্ত মাছ খেতে একদম পছন্দ করেন না।
ইলিশ পোলাও রান্নার রেসিপি – ইলিশ পোলাও রান্নার নিয়ম
কিন্তু ইলিশ মাছ কাটাযুক্ত মাছ হলেও ইলিশ পোলাও রেসিপিটি এতটাই মজাদার ও সুস্বাদু যে ছোট বড় সকলেই খেতে পছন্দ করবে।রেসিপিটি আমাদের দেশে এতটাই খ্যাতি অর্জন করেছে যে যুগ যুগ ধরে আমাদের দেশের প্রতিটি ঘরে তৈরি হয়ে আসছে। চলুন তাহলে জেনে নেয়া যাক রেসিপিটি তৈরির জন্য আমাদের কি কি উপকরণ প্রয়োজন।
ইলিশ পোলাও রান্নার রেসিপি উপকরণসমূহ
● ইলিশ মাছ
● ভাতের চাল
● মসুর ডাল
● সয়াবিন তেল
● পেঁয়াজ বাটা
● মরিচ বাটা
● আদা বাটা
● ধনিয়া গুঁড়া
● লবণ
● তেজপাতা
● এলাচ
● গোলমরিচ
● আস্ত কাঁচা মরিচ
ইলিশ পোলাও রান্নার রেসিপি উপকরণের পরিমাণ
● ইলিশ মাছ- ১৫ পিস
● ভাতের চাল- ৫ কাপ
● মসুর ডাল ৩ কাপ
● সয়াবিন তেল- ২.৫ কাপ
● পেঁয়াজ বাটা- ২ চামচ
● মরিচ বাটা- ২.৫ চামচ
● আদা বাটা- ৩ চামচ
● ধনিয়া গুঁড়া- ১.৫ চামচ
● লবণ- পরিমানমতো
● তেজপাতা- ৪টি
● এলাচ- ৫টি
● গোলমরিচ গুড়া- ২ চামচ
● আস্ত কাঁচা মরিচ- ১০ টি
ইলিশ পোলাও রান্নার নিয়ম
রেসিপিটি তৈরি করার জন্য আপনারা যে কোন ধরনের চাল ও ডাল ব্যবহার করতে পারেন, এমনকি আপনারা যদি না চান তাহলে ডাল ব্যবহার না করলেও পারেন। তবে আমার পছন্দ অনুযায়ী রেসিপিতে আমি ভাতের চাল ও মসুর ডাল ব্যবহার করছি।
● তাজা ইলিশ মাছ ভালোভাবে কেটে ধুয়ে পরিষ্কার করে আলাদা একটি পাত্রে রেখে দিতে হবে।সাথে অন্য দুটি পাত্রে চাল ও ডালগুলো ভালোমতো ধুয়ে আলাদা করে পানি ঝরানোর ব্যবস্থা করতে হবে।
● এখন একটি পরিস্কার পাত্রে সয়াবিন তেল দিয়ে গরম করে নিতে হবে ও সেখানে পেঁয়াজ বাটা- ২ চামচ, মরিচ বাটা- ২.৫, চামচ, আদা বাটা- ৩ চামচ দিয়ে ভালোকরে নেড়ে নিতে হবে।
● কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর সে পাএেই ধনিয়া গুঁড়া- ১.৫ চামচ,গোলমরিচ গুড়া- ২ চামচ ও লবণ পরিমানমতো, দিয়ে মিশ্রনটি নেড়ে আবার ভালোমতো ঢাকনা দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে।
● মসলাটি কিছুক্ষণ কষিয়ে নেওয়ার পর সেখানে অল্প আচে ইলিশ মাছ গুলো দিয়ে দিতে হবে।
● ইলিশ মাছগুলো হালকা সিদ্ধ হয়ে গেলে মাছগুলো আলীদা পাত্রে নামিয়ে রাখতে হবে এবং একই মসলায় পানি ঝরিয়ে নেয়া চাল ও ডাল গুলো দিয়ে ৫ থেকে ১০ মিনিট নেড়ে ঢাকনা দিয়ে ঢেকে দিতে হবে।
● কিছুক্ষণ পর ঢাকনা তুলে ফুটন্ত গরম পানি চাল ও ডালে দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। ফুটন্ত গরম পানি দিলে একটু সুবিধা সেটি হল- চাল-ডাল সিদ্ধ হতে বেশি সময় নাও লাগতে পারে। আপনারা চাইলে ফুটন্ত গরম পানি না দিয়ে নরমাল পানিও ব্যবহার করতে পারেন।
● চাল-ডাল সিদ্ধ হয়ে এলে ইলিশ মাছগুলো আস্তে করে দিয়ে দিতে হবে যেন মাছগুলো ভেঙে না যায়। এর সাথেই তেজপাতা এলাচ ও আস্ত কাঁচামরিচ গুলো দিয়ে ঢেকে দিতে হবে যা ইলিশ পোলাও রেসিপি এর স্বাদ আরো দ্বিগুণ বৃদ্ধি করবে।
● ১০ থেকে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করার পর ঢাকনা তুলে দেখা যাবে রান্নাটি সম্পূর্ণভাবে হয়ে গিয়েছে। এখন সুন্দর একটি পরিষ্কার পাএে পরিবেশন করে নিতে পারেন। পরিবেশনের সৌন্দর্য রক্ষায় গোল করে পেঁয়াজ কেটে, মরিচ দিয়ে পোলাওয়ের উপরে সাজিয়ে তুলতে পারেন।
রেসিপিটি খেতে কেমন ও কোন সময় খেতে হয়
● ইলিশ পোলাও রেসিপিটি খেতে যেমন চমৎকার তেমনই মুখরোচক।
● বৈশাখ মাস থেকে আষাঢ় মাস পর্যন্ত ইলিশ পোলাও খাওয়ার উওম সময়। এমনকি বাংলাদেশের শীতকালে প্রায়শই এই খাবারটি তৈরি করা হয়, কারণ ইলিশ মাছ বাংলাদেশে এই সময়ে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়।
ইলিশ পোলাও রান্নার রেসিপি খাওয়ার উপকারিতা
● ইলিশ পোলাও রেসিপিতে ব্যবহৃত ইলিশ মাছ আমাদের মানবদেহে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। বাঙালির প্রিয় মাছের মধ্যে ইলিশ অনন্য। খেতে যেমন সুস্বাদু, তেমনি পুষ্টিগুণেও বেশ। অনেকগুলো খাদ্য উপাদানের এক ধরনের বিরাট পুষ্টির ভাণ্ডার এই মাছে রয়েছে।
● গবেষকরা বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বলেছেন- ইলিশ মাছে থাকে পলিআনস্যাচুরেটেড ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড, ইপিএ ও ডিএইচএ, যা হৃদরোগ, স্ট্রোক, উচ্চ রক্তচাপ, অ্যারিথেমিয়া, ডায়াবেটিস, আথ্রাইটিসসহ ব্রেন ডেভেলপমেন্ট ও ক্যানসার প্রতিরোধ করায় বিশেষভাবে কার্যকরী ভূমিকা রাখে।
● ইলিশ মাছে অধিক পরিমাণে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড থাকার ফলে হার্টের ট্রাইগ্লিসারাইডের পরিমাণ ও উচ্চ রক্তচাপ হ্রাস করে আনে। একইসাথে রক্ত জমাট বাধার প্রতিরোধশক্তি অর্জন করে। ইলিশ মাছ মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়িয়ে তুলে এবং ইনসুলিন নিয়ন্ত্রণ রাখে।
● ইলিশ পোলাও খাওয়ার ফলে ইলিশ হতে প্রাপ্ত ভিটামিন এ, ডি ও ই দেহের জন্য উপকারি।খুব কম খাবারের মধ্যেই ভিটামিন ডি পাওয়া যায়। ভিটামিন এ রাতকানা রোগ ও ভিটামিন ডি শিশুদের রিকেটস রোগ প্রতিরোধ করে।
● এছাড়াও ইলিশ পোলাও রেসিপি খাওয়ার মাধ্যমে চাল-ডালের মিশ্রনের প্রেক্ষিতে আমরা কার্বোহাইডেট ও প্রোটিনের চাহিদা একসাথে পূরণ করতে পারি।
● ইলিশ মাছ যত তাজা হবে এর পুষ্টিগুণ আমাদের দেহে ততবেশি কাজ করবে চেষ্টা করতে হবে ইলিশ পোলাও রেসিপিটি রান্না করার সময় আমাদের ইলিশ মাছগুলো যেনো তাজা হয় অনেকদিন আগে থেকে কেনা মাছ না হয়া উত্তম।
ইলিশ পোলাও রান্নার রেসিপি খাওয়ার অপকারিতা
● এলার্জি রোগী ও কিডনি রোগীদের জন্য এই রেসিপিটি এড়িয়ে চলার উত্তম। আমাদের মধ্যে এমন অনেক ব্যক্তিরা রয়েছেন যাদের চোখে, হাতে, পায়ে বা শরীরের যে কোন অংশে এলার্জি বা চুলকানো জনিত সমস্যা রয়েছে। তাদের জন্য চিকিৎসকরা ইলিশ মাছ খাওয়া নিষিদ্ধ করে থাকেন। তারা যদি ইলিশ পোলাও রেসিপি খেয়ে থাকেন হয়তো তাদের এলার্জিজনিত সমস্যা আরো বেড়ে যেতে পারে।
● এমন কি কিডনি রোগীদের ইলিশ পোলাও খাওয়ার ফলে কিডনি সমস্যা বেড়ে যেতে পারে। শ্বাসকষ্ট রোগীদেরও ইলিশ মাছ খাওয়া নিষিদ্ধ বলে ধরা হয়।