
বাংলাদেশের উচ্চ প্রজনন হারের কারণ গুলো লিখ
বাংলাদেশে উচ্চ প্রজনন হারের কারণ গুলো লিখ ।।
বাংলাদেশে উচ্চ জন্মহারের কারণসমূহ আলোচনা কর।
উত্তর : ভূমিকা : বাংলাদেশের অন্যতম এক নম্বর সমস্যা হলো জনসংখ্যা সমস্যা। এদেশের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো দরিদ্রতা। প্রাকৃতিক সম্পদের তুলনায় এদেশের জনসংখ্যা অধিক হওয়ায় তা ক্রমেই প্রজননতাকে নির্দেশ করছে
নানা কারণে এদেশের প্রজনন ক্ষমতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তার মধ্যে অভাব, দরিদ্রতা, ধর্ম, খাদ্যাভ্যাস, শিক্ষা অন্যতম। বাংলাদেশে উচ্চ প্রজনন হারের কারণে জনসংখ্যার আধিক্যজনিত বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিচ্ছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হলো উচ্চ প্রজনন হার। এদেশে উচ্চ প্রজনন হারের মাত্রা অধিক। কম বয়সে সন্তান ধারণ উচ্চ প্রজনন হারের নমুনা।
→ প্রজনন হার : সাধারণত প্রজনন হলো কোনো নারী বা নারী সমষ্টির জীবিত সন্তান জন্মদানের ক্ষমতা। অর্থাৎ বলা যায় যে, কোনো নির্দিষ্ট সময়ে নারী সমষ্টি যে পরিমাণ জীবিত সন্তান জন্মদান করে তাকে প্রজনন হার বলে । একে আবার তাদের প্রকৃত হার বলে ।
বাংলাদেশে উচ্চ প্রজনন হারের কারণ : বাংলাদেশ একটি সংখ্যাধিক্য দেশ। এদেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার খুবই বেশি। এর নানারকম কারণ রয়েছে। নিম্নে কিছু কারণ বর্ণনা করা হলো :
১. ভৌগোলিক অবস্থান ও জলবায়ু : ভৌগোলিক অবস্থান এবং জলবায়ু প্রজনন বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। বাংলাদেশের আবহাওয়া উষ্ণ এবং আরামদায়ক। কারণ বাংলাদেশ একটি গ্রীষ্ম প্রধান দেশ। স্বাভাবিকভাবে গ্রীষ্ম প্রধান দেশের মেয়েরা শীত প্রধান দেশের মেয়েদের তুলনায় অনেক কম বয়সে সন্তান জন্মদানের ক্ষমতা লাভ করে। এজন্য এদের প্রজনন ক্ষমতা বেশি।
২. খাদ্যাভ্যাস : অধিক প্রজননের অন্যতম আরেকটি কারণ হলো খাদ্যাভ্যাস । বাংলাদেশের লোকেরা শ্বেতসার জাতীয় খাদ্য বেশি খায়। যেমন— ভাত, আলু, গম ইত্যাদি। গবেষণায় দেখা যায় যে, শ্বেতসার জাতীয় খাদ্য বেশি খেলে মানুষের প্রজনন ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। এভাবে এদেশের জনসংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। কারণ এদেশের লোকের প্রজনন ক্ষমতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
৩. শিক্ষার অনগ্রসরতা : শিক্ষা এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে ব্যক্তি অভিজ্ঞতা অর্জন করে। শিক্ষা মানুষের মনুষ্যত্বকে জাগিয়ে তোলে। এদেশে ব্যাপক শিক্ষা বিস্তার করেনি এবং অধিকাংশ লোক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত। শিক্ষার অভাবে নারীরা জানতে পারে না কিভাবে সন্তান জন্মহার নিয়ন্ত্রণ করা যায় । ফলে অধিক সন্তান জন্ম দেয়। যা অধিক প্রজনন নিদের্শক।
৪. ধর্মের কু-প্রভাব : বাংলাদেশ একটি মুসলিম প্রধান দেশ। মুসলিম দেশ হিসেবে এর প্রধান ধর্ম ইসলাম। আমাদের সমাজে মানুষ খুবই ধর্মভীরু হয়। ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গির কারণে ছেলেমেয়েদের বয়ঃপ্রাপ্তির সাথে সাথে বিয়ে দিয়ে দেন। বাল্যবিবাহের ফলে অধিকহারে সন্তান জন্ম দেয়। আবার ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে জন্মনিরোধক ব্যবহারকে তারা পাপ কাজ হিসেবে বিবেচনা করে। তাই প্রজনন হার বেশি।
৫. বাল্যবিবাহ ও বহুবিবাহ : বাল্যবিবাহ এবং বহুবিবাহ অধিক প্রজননশীলতার অন্যতম কারণ। আমাদের দেশে বাল্যবিবাহ এবং বহুবিবাহ বেশ প্রচলিত। বিশেষত গ্রামীণ সমাজে এ প্রথা বেশি লক্ষ্য করা যায়। এদেশের মেয়েদের বিবাহের বয়স পূর্ণ হবার আগেই বিয়ে হয়ে যায়। তাই অল্প বয়সে সাংসারিক জীবনে অধিক সন্তান জন্ম দেয়। অন্যদিকে একজন পুরুষ একই সাথে একাধিক স্ত্রী লোক গ্রহণ করায় অধিক সন্তান জন্ম দেয়। ফলে এদের প্রজনন হার অনেক বেশি।
৬. জন্মনিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে অজ্ঞতা : বাংলাদেশ দরিদ্র কবলিত দেশ। এদেশের অধিকাংশ লোক দরিদ্র সীমার নীচে বসবাস করে। এদেশের অধিকাংশ লোক অশিক্ষিত। এসব অশিক্ষিত লোক তাদের জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করতে পারে না এবং জন্মনিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে সম্পূর্ণ অজ্ঞ। আবার সামাজিক ও ধর্মীয় কারণে অনেকেই একে পাপ কাজ বলে মনে করে । ফলে এদেশে উচ্চ প্রজনন হচ্ছে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, দেশে বিদ্যমান জনসংখ্যার মৌলিক চাহিদা সরকার যোগান দিতে পারছে না অথচ এর সাথে প্রতি বছর আরো যে নতুন মুখ যুক্ত হচ্ছে তাতে এ সমস্যা আরো প্রকট হচ্ছে। আমাদের দেশের নানারকম সমস্যা এর জন্য দায়ী। শিক্ষার অভাব, দরিদ্রতা, খাদ্যাভ্যাস, ধর্ম ইত্যাদি এদেশের জনগণের প্রজনন হার বৃদ্ধি করছে।