
বাংলাদেশের জনসংখ্যার বৈশিষ্ট্য আলোচনা কর
বাংলাদেশের জনসংখ্যার বৈশিষ্ট্য লিখ
অথবা, বাংলাদেশের জনসংখ্যার বৈশিষ্ট্য বা প্রকৃতি কী কী
উত্তর : ভূমিকা : একটি দেশ গঠনের জন্য যে কয়টি মৌলিক উপাদান প্রয়োজন, জনসংখ্যা তার মধ্যে অন্যতম। কোনো দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সে দেশের জনসংখ্যার অবদান অনস্বীকার্য।
জনসংখ্যাই সে দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ ও সুযোগ-সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটায়। শ্রমশক্তির অন্যতম উৎস হলো জনসংখ্যা। জনসংখ্যা যেমন উৎপাদন করবে তেমনি তাদের ভোগ করার অধিকারও আছে।
প্রত্যেকটি দেশের জনসংখ্যার নিজস্ব বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এ জনসংখ্যা হলো একটি দেশের শ্রমশক্তি। শ্রমশক্তির মাধ্যমে কোনো দেশের প্রাকৃতিক সম্পদকে কাজে লাগিয়ে অর্থনৈতিক উন্নয়ন হয় । এ জনসংখ্যার নিজস্ব কিছু বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান।
→ জনসংখ্যার বৈশিষ্ট্যসমূহ : নিম্নে এ সম্পর্কে বর্ণনা করা হলো :
১. জনসংখ্যার বৃহদায়তন : এদেশের জনসংখ্যার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো বিশাল আয়তন। আয়তনের দিক থেকে বিশ্বের ৯০তম এবং জনসংখ্যার দিক থেকে এটি পৃথিবীর ৭তম বৃহত্তম দেশ।
এদেশের আয়তন হলো ১,৪৭,৫৭০ বর্গকিলোমিটার। এত অল্প আয়তনের জায়গায় বসরাসকারী লোকসংখ্যা প্রায় ১৬ কোটি, জনসংখ্যার আধিক্যের কারণে এদেশে প্রতিনিয়ত নানারকম সমস্যা দেখা দিয়েছে। এ জনসংখ্যা আজ সম্পদ না হয়ে বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে ।
২. জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার বেশি : বাংলাদেশে জনসংখ্যা দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে। অন্যান্য দেশের তুলনায় এ হার অনেক বেশি। যেমন—১৯৫১-৬১ সালে বৃদ্ধির হার ছিল ২.১২%। ১৯৯১ সালে এ হার ২.০৫ এবং ২০০১ সালে ২.৪৮% ২০১২ সালে এ হার এসে দাঁড়ায় ১.৩৪ এ ।
৩. নারী-পুরুষের অনুপাত : বাংলাদেশে সাধারণত নারীদের চেয়ে পুরুষের হার বেশি। বিগত বছরগুলোর আদমশুমারি একথাই প্রমাণ করে । ২০০১ সালের হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশে পুরুষ ও মহিলার অনুপাত হলো ১০৪:১০০।
আবার ২০০৮ সালে এ হার ছিল ১০৫:১০০। বর্তমানে ২০১৩ সালের হিসাব অনুযায়ী পুরুষ ও নারীর অনুপাত হলো ১০৩:১০০।
৪. নির্ভরশীল অনির্ভরশীল জনসংখ্যা : জনসংখ্যা বিষয়ক বিভিন্ন রিপোর্ট অনুযায়ী এদেশে অনির্ভরশীল জনসংখ্যার তুলনায় নির্ভরশীল জনসংখ্যাই বেশি। এদেশে নির্ভরশীল জনসংখ্যা (অর্থাৎ ১৫ এবং ৬০+) মোট জনসংখ্যার ৫৫ ভাগ।
এছাড়া মোট শ্রম জনসংখ্যার ভাগ হলো ৩১ ভাগ। সুতরাং দেখা যায়, এই বিশাল নির্ভরশীল জনসংখ্যার অন্নের ব্যবস্থা এই অল্প অনির্ভরশীল জনসংখ্যাকেই করতে হয় ।
৫. আয়ুষ্কাল : বাংলাদেশে অর্থনৈতিক সমীক্ষায় প্রকাশিত তথ্যানুযায়ী বাংলাদেশের গড় আয়ুষ্কাল ৬৮.৬ বছর। তার মধ্যে পুরুষের গড় আয়ু ৬৬.৮ বছর এবং মহিলাদের গড় আয়ু ৭০ বছর।
বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় আমাদের এ প্রত্যাশিত আয়ুষ্কাল অনেক কম। যেমন— আমেরিকার গড় আয়ু ৭৩, ব্রিটেনের জনগণের প্রত্যাশিত গড় আয়ুষ্কাল ৭২ বছর। তবে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের লোকের গড় আয়ু কিছুটা বেড়েছে বলে মনে করা হয় ।
৬. ধর্মভিত্তিক জনসংখ্যা বণ্টন : বাংলাদেশের জনসংখ্যার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো ধর্মের প্রভাব। ধর্ম হিসেবে বাংলাদেশ একটি মুসলিম প্রধান দেশ। এদেশের শতকরা ৯০.৪ ভাগ লোক মুসলমান। হিন্দু শতকরা ৮.৫ ভাগ এবং এছাড়া অন্যান্য ধর্মের মানুষও বিদ্যমান রয়েছে।
৭. নিম্ন শিক্ষিতের হার : এদেশের জনসংখ্যার আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো শিক্ষার হার খুবই কম। বাংলাদেশের লোকের শিক্ষিতের হার কম। এদেশের শতকরা মাত্র ৬৪ ভাগ শিক্ষিত। আমাদের নারী শিক্ষার হার আরো কম ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, বাংলাদেশের জনসংখ্যা ঋণাত্মক বৈশিষ্ট্যে বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত । অধিক জন্মহার, বাল্যবিবাহ, দারিদ্র্য ইত্যাদি কারণে জনসংখ্যা দিন দিন বেড়ে চলেছে।
আমরা লক্ষ্য করে থাকি, এদেশের জনসংখ্যার মাঝে শিক্ষার মান নিম্ন, জীবনযাত্রার মান নিম্ন, নিম্ন চিকিৎসা সেবা, আরো নিম্ন মানব উন্নয়ন। এসকল কারণে এদেশের জনসংখ্যার উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে ।