
বাংলাদেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সামাজিক কারণসমূহ উল্লেখ কর
বাংলাদেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সামাজিক কারণসমূহ আলোচনা কর।
উত্তর : ভূমিকা : বর্তমান বিশ্বে অন্যতম একটি সমস্যা হলো জনসংখ্যা সমস্যা। জনসংখ্যা সমস্যা নিয়ে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন সময় অনেকবার আলোচনা হয়েছে। জনসংখ্যা এসব আলোচনাকে উপেক্ষা করে বৃদ্ধি পাচ্ছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির যেমন অর্থনৈতিক কারণ রয়েছে তেমনি রয়েছে সামাজিক কারণ। সামাজিক কারণসমূহের মধ্যে বিদ্যমান হলো শিক্ষা, বাল্যবিবাহ, পুত্র সন্তানের আশা ইত্যাদি ।
সমাজের নানারকম আশা জনসংখ্যা বৃদ্ধি করছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার পেছনে নানারকম কারণ বিদ্যমান থাকে । তার মধ্যে সামাজিক কারণ অন্যতম। সামাজিক পরিবেশে বিভিন্নভাবে জনসংখ্যা বৃদ্ধি করেছে।
→ জনসংখ্যা বৃদ্ধির সামাজিক কারণসমূহ : জনসংখ্যা বৃদ্ধির পেছনে সামাজিক কারণসমূহ ওতপ্রোতভাবে জড়িত। নিম্নে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সামাজিক কারণসমূহ আলোচনা করা হলো :
১. শিক্ষার অভাব : শিক্ষার অভাব জনসংখ্যা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। এদেশের গ্রামের একটা অংশ অশিক্ষিত এবং অর্ধশিক্ষিত অশিক্ষিতরা তাদের সন্তানদের সুষ্ঠুভাবে লালন পালন করে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পারে না। ফলে তারা অধিক সন্তান নেয়। অন্যদিকে পরিবার পরিকল্পনা গ্রহণের গুরুত্ব তারা বোঝে না। যা জনসংখ্যা বৃদ্ধি করে ।
২. বাল্যবিবাহ এবং বহুবিবাহ : বিবাহ হলো বৈধ উপায়ে সন্তান জন্মদানের অন্যতম একটি মাধ্যম। বাংলাদেশের গ্রামীণ সমাজে এখনও বাল্যবিবাহ রীতি প্রচলিত আছে। বাল্যবিবাহের কারণে তারা অল্প বয়সে বেশি সন্তান জন্মদানের ক্ষমতা অর্জন করে।
অথচ সরকার এদেশের মেয়েদের বয়স ১৮ এবং পুরুষদের বয়স ২১ বছর করে আইন প্রণয়ন করেছে। কিন্তু ১৮ বছর ও ২১ বছর হওয়ার আগেই তাদের বিবাহ দেওয়া হয়। অন্যদিকে এদেশের ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী বহুবিবাহ রীতি প্রচলিত। বহু স্ত্রী বিবাহ রীতির কারণে একজন পুরুষ একই সাথে একাধিক স্ত্রী গ্রহণ করে এবং অধিক সন্তান জন্ম দিয়ে থাকে । এসব কারণে জনসংখ্যা বৃদ্ধি অধিক হচ্ছে।
৩. মৃত্যুহার হ্রাস : মৃত্যুহার হ্রাস জনসংখ্যা বৃদ্ধির অন্যতম যে একটি কারণ। বাংলাদেশ চিকিৎসাবিজ্ঞানে যথেষ্ট পরিমাণে অগ্রগতি টা সাধন করেছে। দেশের বিভিন্ন জায়গায় হাসপাতাল, ক্লিনিক ও স্বাস্থ্য কেন্দ্র স্থাপিত হয়েছে। সুচিকিৎসার ফলে অনেকেই মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে আসছে । কিন্তু জন্মহার এখনও কমে নি।
৪. নারী শিক্ষার অভাব : বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক নারী। কিন্তু এই নারীদের মাঝে সচেতনতা, শিক্ষার যথেষ্ট অভাব রয়েছে। শিক্ষার অভাবে নারীরা আজও রক্ষণশীল হয়ে আছে। নারীরা এখনও তাদের প্রকৃত স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত।
তারা পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচিতে যথাযথ ভূমিকা রাখতে পারে না। আবার তাদেরকে সন্তান নিতে অনেক পুরুষ বাধ্য করে।
৫. সামাজিক ও ধর্মীয় কুসংস্কার : বাংলাদেশ একটি গ্রাম = প্রধান দেশ। এদেশের অধিকাংশ লোক গ্রামে বসবাস করে। গ্রামের লোকজনের মধ্যে ধর্মীয় কুসংস্কার এমনভাবে গেথে গেছে যে তা আর বেরিয়ে আসতে পারছে না। তারা মনে করে পরিবার পরিকল্পনা গ্রহণ পাপ। কারণ এর মাধ্যমে সন্তান মারা হয়। শিক্ষার অভাবে তারা এসব চিন্তা করে ।
৬. পুত্রসন্তানের কামনা : পুত্র সন্তান কামনা অনায়াসে জনসংখ্যা বৃদ্ধির অন্যতম একটি কারণ, পুত্র সন্তানের আশায় এদেশের পুরুষেরা ও মহিলারা কয়েকটি কন্যা সন্তান জন্ম দিয়েছে। তারপরও তারা পুত্র সন্তানের আশায় সন্তান জন্ম দেয়। এভাবে দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার বেড়ে যাচ্ছে।
৭. ভৌগোলিক অবস্থান : গ্রীষ্ম প্রধান দেশ হওয়ায় এদেশের আবহাওয়া উষ্ণ ও আরামদায়ক। স্বাভাবিকভাবে উষ্ণ প্রধান দেশের অঞ্চলের মেয়েদের শীতপ্রধান দেশের মেয়েদের চেয়ে সন্তান জন্মদান ক্ষমতা বেশি থাকে। তাই জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, সমাজের এমন অনেক কারণ আছে যা জনসংখ্যা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। কিন্তু যদি আমরা জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে আমাদের দেশের জনসংখ্যাকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারি তবে কয়েক যুগ পরে এদেশে জনসংখ্যার বিস্ফোরণ ঘটবে। যার ফল হবে অনাহার, অশান্তি, বিশৃঙ্খলা ইত্যাদি ।