লোকমান হাকিমের ১০টি উপদেশ জেনে নিন কাজে লাগবে

16 Aug, 2023
লোকমান হাকিমের ১০টি উপদেশ জেনে নিন কাজে লাগবে
3.3/5 - (3 votes)

লোকমান হাকিমের ১০টি উপদেশ – প্রজ্ঞা এবং জ্ঞান হলো এমন একটি গুণ, যা আল্লাহ সকলকেই দেন না। তেমনি একজন প্রজ্ঞাবান ব্যক্তি ছিলেন লোকমান হাকিম। যাকে আল্লাহ তায়ালা বিশেষ বুদ্ধিমত্তা এবং উত্তম নৈতিক চরিত্র দান করেছিলেন। লোকমান হাকিম তার ছেলেকে দেওয়া এমন কিছু উপদেশ এর কারণে, আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআন মাজীদে তার উপদেশ বর্ণনা করেছেন।

লোকমান হাকিম তার ছেলেকে উদ্দেশ্য করে কিছু উপদেশ দিয়েছিলেন, যে উপদেশ গুলোর মধ্যে একটি হলো, “হে বৎস, আল্লাহর সঙ্গে শরিক করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহর সঙ্গে শরীক করা মহা অন্যায়।” (সূরা লোকমান আয়াত : ১৩) জীবনে চলার পথে যারা আল্লাহর সাথে শরীক করেন, তাদের জন্য লোকমান হাকিমের এই উপদেশ টি অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

সেই সাথে লোকমান হাকিম আরো কিছু উপদেশ দিয়েছেন, যেগুলো দ্বারা লোকমান হাকিমের প্রজ্ঞা ও জ্ঞান প্রকাশ পায়। আজকের এই আর্টিকেলে আমি এমন লোকমান হাকিমের ১০

টি উপদেশ সম্পর্কে বলব, যেগুলো প্রত্যেকটি মুসলমানের জন্য জানা জরুরী।

লোকমান হাকিম কে ছিলেন?

লোকমান হাকিম ছিলেন একজন প্রজ্ঞাবান ব্যক্তি, যার নামে মহান আল্লাহ তায়ালা কুরআনে একটি সূরা নাযিল করেন। ‌আর লোকমান হাকিমের নাম অনুসারে, এই সূরাটির নাম “সূরা লোকমান”।

সূরা লোকমান-এ এই প্রজ্ঞাবান ব্যক্তিটির এমন কিছু উপদেশের কথা বর্ণনা করা হয়েছে, যা একজন মুসলমানের জন্য পালন করা অপরিহার্য।

আমরা প্রায়ই বিভিন্ন বিশিষ্ট ব্যক্তি এবং জ্ঞানী ব্যক্তিবর্গের কথা শুনে থাকি। কিন্তু, এসব কথিত বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সাথে এমন কিছু ব্যক্তির প্রজ্ঞা এবং জ্ঞানের বর্ণনা করতে গেলে, এই প্রজ্ঞা তাদের কাছে কিছুই নয়।

See also  ভালো মৃত্যুর ১৫ টি আলামত | ভালো মৃত্যুর কিছু আলামত

ইসলামে ও এমন কিছু বাছাইকৃত ব্যক্তিদের বাণী রয়েছে, যা যাদের জীবন আমাদের জন্য প্রেরণা এবং জ্ঞানের মাধ্যম হতে পারে। তেমনি একজন বিশিষ্ট ধার্মিক এবং জ্ঞানী ব্যক্তি হলেন লোকমান হাকিম।

পবিত্র কোরআনে আল্লাহতালা যে বিষয়টিকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে বলেছেন, তা হলো শিরক। কুরআনে শিরিকের ব্যাপারটি খুব কঠোরভাবে বলা হয়েছে।‌

আর লোকমান হাকিম তার ছেলেকে আল্লাহর সাথে শিরিক করার ব্যাপারে উত্তম উপদেশ দিয়েছেন। চলুন, দেখে নেওয়া যাক, লোকমান হাকিমের এরকম ১০ টি উপদেশ সম্পর্কে।

লোকমান হাকিমের ১০টি উপদেশ জেনে নিন কাজে লাগবে

লোকমান হাকিম তার ছেলেকে আল্লাহর সাথে শরীক স্থাপন করার ব্যাপারে কঠোরভাবে সতর্ক করেছেন। এছাড়াও, তিনি তার ছেলেকে ন্যায় ও নৈতিকতার শিক্ষার উপদেশ দিয়েছেন। কোরআনে বর্ণিত লোকমান হাকিমের ‌এরকমই ১০ টি উপদেশ হলো:

  • যখন লোকমান উপদেশচ্ছলে তার পুত্রকে বলল: হে বৎস, আল্লাহর সাথে শরীক করো না। নিশ্চয় আল্লাহর সাথে শরীক করা মহা অন্যায়।
  • ধৈর্য ধারণ করা সম্পর্কে লোকমান হাকিম তার ছেলেকে উপদেশ দেন, “হে বৎস, বিপদাপদে ধৈর্য ধারণ করো”। (সূরা লোকমান ১৭)
  • লোকমান হাকিম তার ছেলেকে সালাতের উপদেশ দিতে গিয়ে বলেন, “হে বৎস, নামাজ কায়েম কর”। (সূরা লোকমান ১৭)
  • লোকমান হাকিম তার ছেলেকে সৎ কাজ এবং মন্দ কাজের আদেশ দিতে গিয়ে বলেন, “হে বৎস, সৎ কাজে আদেশ দাও, মন্দ কাজে নিষেধ কর”। (সূরা লোকমান ১৭)
  • লোকমান হাকিম তার ছেলেকে উপদেশ দেন, “অহংকারবশে তুমি মানুষকে অবজ্ঞা করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ কোন দাম্ভিক অহংকারী কে পছন্দ করেন না।” (সূরা লোকমান ১৮)
  • লোকমান হাকিম তার পুত্রকে উপদেশ দেন, “নিজ পদচারণায় মধ্যপন্থা অবলম্বন করো এবং নিজ সংযত রাখ। নিশ্চয়ই সর্বাপেক্ষা নিকৃষ্ট স্বর গাধাদেরই স্বর।” (সূরা লোকমান ১৯)
  • লোকমান (আ.)-এর উপদেশ: “আর আমি মানুষকে তার পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহারের জোর নির্দেশ দিয়েছি। তার মাতা তাকে কষ্টের পর কষ্ট করে গর্ভে ধারণ করেছে। তার দুধ ছাড়ানো দু বছরে হয়। নির্দেশ দিয়েছি যে, আমার প্রতি ও তোমার পিতা-মাতার প্রতি কৃতজ্ঞ হও। অবশেষে আমারই নিকট ফিরে আসতে হবে।”  (সুরা লোকমান, আয়াত : ১৪)
  • লোকমান হাকিম তার সন্তানকে বিনয়ের সাথে এমনটি উপদেশ দিয়েছেন যে, “পদচারণে মধ্যবর্তিতা অবলম্বন করো” যা সূরা লোকমানের ১৯ নম্বর আয়াতে প্রথমাংশে রয়েছে।
  • মানুষের সাথে সদ্ব্যবহার করার উপদেশ হিসেবে লোকমান হাকিম তার ছেলেকে বলেন, “কণ্ঠস্বর নিচু কর। নিঃসন্দেহে গাধারই স্বরই সর্বাপেক্ষা অপ্রীতিকর।” লোকমান হাকিমের এই উপদেশটি সূরা লোকমানের ১৯ নম্বর আয়াতের শেষ অংশে রয়েছে।
  • লোকমান হাকিম বিপদ-আপদে সবর করার জন্য এমনটি উপদেশ দেন যে, “বিপদাপদে সবর করো। নিশ্চয়ই এটা সাহসিকতার কাজ”। এটি সূরা লোকমানের ১৭ নম্বর আয়াতের শেষ অংশে রয়েছে।
See also  মানসিক ভাবে শক্তিশালী হওয়ার ১০টি শ্রেষ্ঠ উপায়

মহান আল্লাহ তা’আলা যত জন ব্যক্তিকে বিশেষ জ্ঞানও প্রজ্ঞা দান করেছিলেন, তার মধ্যে লোকমান হাকিম অন্যতম। লোকমান হাকিমের জ্ঞান ও প্রজ্ঞার পরিচিতি সারা বিশ্বজুড়ে।

লোকমান হাকিম তার ছেলেকে উদ্দেশ্য করে যেসব উপদেশ দিয়েছেন, আল্লাহতালা তার কথাকে নসিহত হিসেবে কুরআনের বর্ণনা করেছেন। আর, লোকমান হাকিমের নামে একটি সূরা অবতীর্ণ করেছেন, যেখানে লোকমান হাকিমের কিছু বিশেষ উপদেশ বর্ণনা করা হয়েছে।

ছেলেকে দেওয়া লোকমান হাকিমের এসব উপদেশ বাণী গুলো বিশ্ব বিখ্যাত। তিনি তার ছেলেকে উত্তম উপদেশ হিসেবে বলেছেন যে, আল্লাহর সাথে শরিক করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহর সাথে শরিক করা মহা অন্যায়।

লোকমান ছিলেন আল্লাহ তায়ালার কৃতজ্ঞ বান্দা গুলোর মধ্য থেকে অন্য কোন একজন এবং যাকে আল্লাহতালা প্রজ্ঞা দান করেছিলেন। লোকমান হতে পেরে দেওয়া উপদেশ বাণী গুলো এখনো মানুষের কাছে চিরস্মরণীয় হয়ে আছে এবং যা কিয়ামত পর্যন্ত থাকবে।

লোকমান হাকিম কি নবী ছিলেন?

লোকমান হাকিম নবী ছিলেন কিনা, সে ব্যাপারে অনেক মতামত রয়েছে। তবে, বিভিন্ন বর্ণনা অনুযায়ী এমনটি পাওয়া যায় যে, তিনি নবী নন, বরং লোকমান হাকিম আল্লাহর একজন সৎ বান্দা ছিলেন। সর্বসম্মত কথা হল, তিনি নবী ছিলেন না, বরং লোকমান হাকিম ছিলেন একজন প্রজ্ঞাপন ব্যক্তি।

লোকমান হাকিম ছিলেন হাবশার বাসিন্দা। লোকমান হাকিম তার সুনাম ও নসিহতপূর্ণ কথার জন্য পুরো বিশ্বে পরিচিত। লোকমান হাকিমের উপদেশ এর মাধ্যমেই বোঝা যায় যে, আল্লাহ তায়ালা তাকে কতটা প্রজ্ঞা ও জ্ঞান দান করেছিলেন।

See also  ১০টি সেরা উপায়ে ঘরে বসে আয় করুন

লোকমান হাকিম সকলের কাছে একজন হাকিম হিসেবে পরিচিত ছিলেন। ‌যার মুখ থেকে প্রজ্ঞাময় কথা বের হতো এবং যেগুলো ছিল অর্থবহ। সেই সাথে, লোকমান হাকিম তার ছেলেকে উদ্দেশ্য করে বলা উপদেশ বাণী গুলোর কারণে আল্লাহর কাছে অধিক প্রিয় একজন বান্দা হিসেবে ও পরিচিতি পেয়েছেন।

যিনি, কিয়ামত পর্যন্ত মানুষের মাঝে তার উপদেশ বাণী গুলো বর্ণনা করার জন্য পবিত্র কুরআন মাজীদে সূরা লোকমান নামে একটি সূরা নাযিল করেন। উক্ত সূরাতে ছেলেকে উদ্দেশ্য করে বলা লোকমান হাকিমের উপদেশ সমূহ দেওয়া রয়েছে।

মহান আল্লাহ তায়ালা, কুরআন মাজিদে লোকমান হাকিমকে দান করা প্রজ্ঞার কথা বলেছেন। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ তা’আলা কুরআন মজিদের সূরা লোকমানের ১২ নম্বর আয়াতে বলেন, ”আমি লোকমানকে প্রজ্ঞা দান করেছি এই মর্মে যে, আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ হও। যে কৃতজ্ঞ হয়, সে তো কেবল নিজ কল্যাণের জন্যই কৃতজ্ঞ হয়। আর যে অকৃতজ্ঞ হয়, আল্লাহ অভাবমুক্ত, প্রশংসিত।”

লোকমান হাকিমের ১০টি উপদেশ সম্পর্কে শেষ কথা | লোকমান হাকিমের উপদেশ বাণী

লোকমান হাকিমের উপর দেশের কারণে তিনি বিখ্যাত লোকদের মধ্যে অন্যতম সেরা একজন ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত। লোকমান হাকিম তার ছেলেকে যেসব উপদেশ দিয়েছেন, সেগুলো মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে লিপিবদ্ধ করে দিয়েছেন। যার ফলে, লোকমান হাকিমের উপদেশ গুলো কিয়ামত পর্যন্ত মানুষ জানতে পারবে।

লোকমান হাকিমের ছেলেদেরকে দেওয়া নসিহত, সত্যিই আল্লাহতালা সম্পর্কে তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ পায়।

Rk Raihan

1 Comment

  1. Bolaji says:

    Good

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *